গরুর ওলানের রোগ (diseases of cattle pdf )

 

ব্যাকটেরিয়াল রােগসমূহ BACTERIAL DISEASES

• ওলানে ব্যাথা অনুভূত হয় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যায় । • গাভী নিজের বাছুরকে ওলানে দুধ খেতে দিতে বাধা দেয়। • দুধের সাথে ছানার মত জমাট বাধা দুধ দেখা যায়। • বাট দিয়ে দুধের পরিবর্তে পানি, ঘােলাটে দুধ, পুঁজ বের হয় । • যে বাট আক্রান্ত হয় সেই বাটি দিয়ে শুধু পানি বের হয় অথবা রক্ত আসতে পারে। • ওলান শক্ত হতে থাকে এক পর্যায়ে পশু ওলানে হাত দিতে দেয় না। • পশুর অরুচি হয়।

ওলান ফোলার ফলে পশু শুতে পারে না এবং খুড়িয়ে হাঁটে। • ওলানের সামনে অর্থাৎ নাভীর নীচে পানি জমা হয়ে ইডিমা তৈরী করে। • ওলানে অংশ বিশেষ বা বাট একদিকে বাঁকা হয়ে যায়। • পরবর্তীতে ওলানে যে বাট আক্রান্ত সেই কোয়াটারে ফোড়া (Abscess)

পরিলক্ষিত হয় এবং ফোড়া ফেটে যাওয়া স্থান দিয়ে মাঝারী টিসু পচে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। • আক্রান্ত বাট পরবর্তীতে অন্য বাটের তুলনায় কিছুটা ছােট হয়ে আসে। • আক্রান্ত ওলানে ফোড়া ফেটে বের হয়ে যাওয়ার পর ওলান ছােট হয়ে যায়।

বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পশুর মারাত্মক রােগ হয়। তবে বাংলাদেশে যে সব রােগ সাধারণত গবাদী পশুতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে সেই সব রােগ সম্পর্কে আলােচনা করা হল।

ওলান প্রদাহ (Mastitis)। পশুর ওলানের টিস্যুর প্রদাহকে ওলান প্রদাহ (Mastitis) রোগ বলে। লাভজনক ডেয়রী খামার ও গাভী পালনের প্রধান অন্তরায় হলাে ওলান প্রদাহ রােগ। এ রােগের কারণে পশুর দুধ কমে যাওয়া থেকে শুরু করে চিরতরে ওলান বা বাট নষ্ট হয়ে যাওয়া এমন কি পশু মারা যেতে পারে। বাট কানা/নষ্ট গাভী বিক্রি করতে গেলে মাংসের দামে বিক্রয় করতে হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ লােকের ধারণা এ রােগটি মানুষের মুখ। লাগা ও চোখ লাগা থেকে হয়। ফলে প্রথমে গাভীর মালিক কবিরাজ বা ফকিরের পানিপড়া, ঝাড়-ফুক ইত্যাদির আশ্রয় নেয়। এছাড়া ও তাদের ধারণা চিকিৎসা করালে এবং ইনজেকশন দিলে আক্রান্ত গাভীর দুধ কমে যাবে। এ ধারনা পােষণ করে পশু মালিকগণ ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হন না। কুসংস্কারের ফলে পশুর ওলানে প্রচুর ক্ষতিসাধন হয় এবং পরবর্তীতে ব্যয়বহুল চিকিৎসা দিয়েও ততটা সুফল পাওয়া যায়

তবে ওলান প্রদাহ শুরুর সংগে সংগে চিকিৎসা করলে পশুর দুধ উৎপাদনের কোন | ব্যাঘাত না ঘটিয়ে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব। কারণ:

> প্রধানতঃ ২২-৫৬ প্রকার ব্যাকটেরিয়া নামক জীবাণু ও কয়েক প্রকার ছত্রাক | দ্বারা এ রােগ হয়।

> অধিক দুধ উৎপাদনশীল গাভী এ রােগে আক্রান্ত হয়। কিভাবে ওলান প্রদাহ রােগ হয়:

ক) কতিপয় জীবাণু ওলানে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। ওলানে আঘাতজনিত

কারণে (বাছুরের দাঁতের মাধ্যমে, ত্রুটিপূর্ণ দোহন ইত্যাদির) ক্ষত সৃষ্টি হলে

ওলানে জীবাণুর বংশ বিস্তার ঘটে। থ) ওলানের বাট সরাসরি নােংরা থেকে, দুধ দোহনকারী হাত হতে রােগ হতে পারে। গ) ওলানের ছিদ্র দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে এবং দুধ দোহন হতে বিরত থাকলে।

ঘ) অধিক দুধের চাপের কারণে দুধ জমাট বেঁধে এ রােগ সৃষ্টি হয়। লক্ষণ:

• ওলানে প্রদাহের প্রধান লক্ষণ হলাে ওলান ফুলে যাওয়া।



রােগ নির্ণয়: ১। ওলানে উল্লেখযােগ্য লক্ষণ, ওলানে ইন্সপেকশন, পালপেশন ও গাভী আক্রান্ত

হওয়ায় আগে পরে দুধের পরিমান ইত্যাদির মাধ্যমে রােগ নির্ণয় করা যায় । ২। দুধ পরীক্ষা করে যেমন-দুধের বর্ণ, গন্ধ, ঘনত্ব ইত্যাদি ভালভাবে পরীক্ষা

করে রােগ নির্ণয় করা যায়। ৩। ট্রিপ কাপ পদ্ধতিতে এ রােগ নির্ণয় করা যায়। পরীক্ষা পদ্ধতি:

একটি কাল কাপড়ে দুধ ছেকে এই পরীক্ষা করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথম অবস্থায় দুধ পরীক্ষা করে দুধের রংয়ের পরিবর্তন। দুধে Clot ও পুঁজের (Pus) উপস্থিতি পরীক্ষা করা যায় । ৪টি বাটের দুধ পৃথক পৃথক ভাবে পরীক্ষা করে আক্রান্ত বাঁট সনাক্ত করা যায়। ৪। হােয়াইট সাইড (White slide) পরীক্ষাঃ এ পদ্ধতিতে ১টি স্লাইডে ৫ ফোঁটা

আক্রান্ত ব্যাটের দুধের সাথে ২ ফোটা সােডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaoH, 4%) নিয়ে টেস্টটি করা হয়। যদি দুধ স্বাভাবিক থাকে তবে ২০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে Homogenous turbidity সৃষ্টি হবে। যদি দুধের অতিরিক্ত পরিমান WBC

থাকে তবে Fibrin-Clot গঠন হবে যা Sub-clinical mastitis নির্দেশ করে। চিকিৎসা: ওলান ফোলা রােগের চিকিৎসার সফলতা নির্ভর করে রােগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর প্রকারভেদ, আক্রান্তের তীব্রতা ও উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন ইত্যাদির উপর। এ রােগের চিকিৎসা যত দ্রুত হবে চিকিৎসা ততটা সফল হবে। দেরীতে চিকিৎসা শুরু করলে ওলানের মারাত্মক ক্ষতিসহ চিরদিনের জন্য দুধ কমে যায়। তাই রােগের লক্ষণ দেখার সংগে সংগে চিকিৎসা শুরু করা দরকার। অন্যথায় পণ্ড মালিক অবশ্যই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। নিম্নের পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে পশু দ্রুত রােগ হতে সুস্থ হয়ে উঠে এবং দুধ। কমার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। বড়/মাঝারী গাভীর জন্য: তীব্র প্রকৃতির ওলান প্রদাহেR, (১) ইনঃ প্রােনাপেন ভেট (Renata) ৪০ লাখ/স্টেপটোপেন (Renata) ২.৫ 471/SP Vet 2.5 gm/ Combipen vet 40 lac Vials Sig. ১ ভায়াল করে ১০সিসি বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে মিশিয়ে পর পর ৪ দিন দিলে

বেশী কার্যকরী হয়।

অথবা ইনঃ ডায়াডিন (Renata) 100 ml/Inj. Sulfasol vet 100 ml

(Acme) x ২টি বােতল। Sig. প্রথম দিন ৪০-৫০ মিলি শিরায়/মাংসে এবং পরের দিন থেকে ৩০ সিসি

করে ৪-৫ দিন দিতে হয়। (২) ইনঃ ডিলারজেন (Renata) / ইন, ফুগান (Techno) ১০ ml/Inj.

Histavet (Aci) x২ ভায়াল। | Sig. ৫-১০ মি.লি. করে মাংসে পর পর ৪ দিন। (৩) আক্রান্ত বাট দুধ দোহন করার পর Antimastitis যেমন- Gentamast

টিউব অথবা Masticort সুপার ১০ গ্রাম×২ টি সিরিঞ্জ প্রতিটি ওলানে ১ টি

টিউব প্রতিদিন পর পর ২ দিন ঢুকিয়ে দিতে হবে। (৪)* কুসুম গরম পানি করে তাতে বােরিক পাউডার বা Magnesium sulphate বা

খাদ্য লবন দিয়ে ন্যাকড়া চুবিয়ে নিয়ে ওলানে ২ ঘন্টা পর পর শেক দিতে হবে। এবং ওলান ম্যাসেজ করতে হবে এবং ওলানকে নরম করতে হবে এবং বার বার।

ওলানে শেক দিতে হবে ও ওলান থেকে দুধ বের করে ফেলতে হবে। (৫)/ওঁলানে পচা রক্ত আসলে নিম্নের ইনজেকশন ব্যবহার করলে পশু দ্রত।

অ্যারোগ্য লাভ হয়।

Inj. Chlorson 10 ml x 8 vial/Inj. Chloretetrasone (Advanc) Sig, বড় পর জন্য ২০ মিলি মাংসপেশীতে দিনে একবার পর পর ৫দিন করতে হয়।

(৬) ওলানে ব্যাথা থাকলে ব্যাথানাশক ঔষধ যেমন Inj. A-Fenac vet

(Acme) 1 Inj. Clofenac (Square) /Inj. Genac vet 10,30

ml (Globe)/Inj. Difenvet (Aci) প্রয়ােগ: উপরের যে কোন একটি ঔষধ ১০-১৫ মিলি মাংসপেশীতে দিনে ১ বার

মােট ২-৩ দিন দিতে হবে। বি.দ্র.: সাধারণত ওলানে প্রদাহেঃ রেনামাইসিন ইনজেকশন প্রয়ােগ না করাই ভাল। এতে দুধ কমে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।

 প্রতিরােধ: (ক) সাব ক্লিনিক্যাল mastitis ক্ষেত্রে ম্যাষ্টিকেয়ার (Masticare) পাউডার ২০- ৩০ গ্রাম

দিনে ২ বার মােট ৩-৫ দিন খাওয়ালে এ রােগকে প্রতিরােধ করা যায়। (খ) বাচ্চা প্রসবকারী গাভীর জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা থাকতে হবে। (গ) আক্রান্ত পশুকে ঝাড়-ফুক না দিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। (ঘ) গরুর ওলানে সমস্যা থাকে তার চিকিৎসা করা। (ঙ) গােয়ালাকে প্রতিটি গাভীর দুধ দোহনের সময় এন্টিসেপটিক ঔষধ দ্বারা হাত

ধুয়ে নিতে হবে এবং ওলান ও বাট কুসুম গরম পানি দ্বারা পরিষ্কার করে।

দোহন করা উচিৎ। (চ) একই থামারে ওলান ফোলা আক্রান্ত গাভীকে সবার শেষে দোহন করতে হবে। (ছ) গাভীর ঘরে সপ্তাহে ২ দিন losan বা Temsel বা Dettol/sarakill | মিশ্রিত পানি ছিটাতে হবে। (জ) বাচ্চা দেওয়ার পর গাভী অত্যাধিক বেশী খাওয়ানাে যাবে না। কারণ এতে

দুধের চাপ বেড়ে যাবে তাই সাধারণ খাবার ১ম ৭দিন দিতে হবে। (ঝ) ওলানে অতিরিক্ত দুধ যাতে না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। (ঞ) ওলানে যাতে আঘাত না লাগে যেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। (ট) বাচ্চা প্রসবের পর প্রথম দিন বার বার দুধ দোহন করতে হবে। (ঠ) অধিক উৎপাদনশীল গাভীর বেলায় দিনে ৩-৪ বার দোহন করতে হবে। (ঙ) গর্ভবর্তী অবস্থায় Antimastitis ঔষধ বাটে প্রয়ােগ করে রােগ প্রতিরােধ করা যায়।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post